আমেরিকা-ইসরাইল নয়, বরং মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু যে মুসলমানরা নিজেরাই– সেটা নতুন করে প্রমাণ করলো আফগানিস্তানের প্রতিবেশী উজবেকিস্তান। মধ্য এশিয়ার এই মুসলিম দেশটি আফগানিস্তানের সাথে যেভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করছে, এর ফলে তারা সমগ্র মুসলিম বিশ্বের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত ২০২১ সালে, ইমারত সরকার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফিরে আসলে আমেরিকার তাবেদার আফগান বাহিনী প্রাণভয়ে দিগ্বিদিক পালিয়ে যায়। এদেরই একটি অংশ অন্তত ৪৮ টি বিমান এবং হেলিকপ্টার নিয়ে প্রতিবেশী দেশ উজবেকিস্তানে পালিয়ে যায়।
ইমারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আমেরিকার আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়া এবং ইমারত ক্ষমতায় ফেরত আসার সেই সময়টিতে আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীর যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের সংখ্যা ছিল ১৬২টি। সামরিক বাহিনীতে ভর্তি হয়ে যেসব আফগান এতদিন আমেরিকার গোলামী করেছে এবং সাধারণ জনতাকে হত্যা করেছে, তালেবান ক্ষমতায় ফেরত আসার কারণে প্রাণভয়ে তারা বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্য বেশ কয়েকটি বিমান নিয়ে তাজিকিস্তান চলে যায়। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উচ্চপদস্থ সামরিক ও সরকারি কর্মকর্তা কমপক্ষে ৪৬ টি সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার নিয়ে উজবেকিস্তান পালিয়ে যায়।
সম্প্রতি উজবেকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোনাথন হেনিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন— আমেরিকা এবং উজবেকিস্তানের মধ্যে এই মর্মে চুক্তি হয়েছে যে, সাবেক আফগান সেনাবাহিনীর নিয়ে আসা সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টারগুলো উজবেকিস্তানেই থাকবে এবং উজবেকিস্তানের সামরিক বাহিনী সেগুলো ব্যবহার করবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্য সামনে আসার পরপরই ইসলামী ইমারত তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপাত্র এনায়েতুল্লাহ খাওয়ারেজমি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন– এসব যুদ্ধবিমান উজবেকিস্তানের কাছে হস্তান্তরের কোন অধিকার আমেরিকার নেই।
উজবেকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন— এসব সামরিক সরঞ্জামের আসল মালিক যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক আফগান সেনাবাহিনীকে এগুলো ব্যবহারের জন্য প্রদান করা হয়েছিল। আফগান সৈন্যরা এগুলো ব্যবহার করত, কিন্তু এর মালিক ছিল আমেরিকা। কাজেই আমেরিকা চাইলে এগুলো অন্য যে কাউকেই প্রদান করতে পারে।
কিন্তু মার্কিন কূটনীতিকের এই বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন– আফগান জনগণের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বা কাউকে দান করার কোন অধিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেই। আমেরিকা অবৈধভাবে আফগানিস্তান দখল করেছিল। কাজেই যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়ে যেহেতু দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে, তাই এখানে থেকে যাওয়া সমস্ত সামরিক সরঞ্জামের মালিক ইসলামী ইমারত এবং আফগানিস্তানের জনগণ।
অতএব এসব বিমান ও হেলিকপ্টার উজবেকিস্তানকে প্রদান করার কোন অধিকার আমেরিকার নেই।
আমেরিকার পাশাপাশি উজবেকিস্তানের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন– আমরা আশা করি উজবেক সরকার এ ধরনের নিকৃষ্ট লেনদেন থেকে বিরত থাকবে এবং সৎ প্রতিবেশীর মত আচরণ করবে। পাশাপাশি এসব সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টারগুলো ফেরত দিয়ে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নেওয়ারও তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের হাতে এখন যে পরিমাণ বিমান ও হেলিকপ্টার আছে তা বিশ্বের বহু দেশের কাছেই নেই। বিশেষ করে ব্ল্যাক হক এবং এমআই 24 এর মত অত্যাধুনিক অ্যাটাক হেলিকপ্টার ইমারতের হাতে রয়েছে। কিন্তু এরপরেও চুরি করে নিয়ে যাওয়া সেসব বিমান ও হেলিকপ্টারের মালিক যেহেতু আফগানিস্তান, কাজেই এসব যুদ্ধবিমান ফেরত আনার সম্পূর্ণ অধিকার ইমারত সরকারের রয়েছে।
কিন্তু এখন সুযোগের অপব্যবহার করে মহামূল্যবান এসব সামরিক সরঞ্জাম হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে প্রতিবেশী উজবেকিস্তান। মুসলিম প্রতিবেশী হয়েও আমেরিকার সাথে হাত মিলিয়ে এভাবে গাদ্দারি করা চরম ঘৃণ্য ধরনের কাজ। উজবেকিস্তান ভুলে গেছে– রাশিয়া-আমেরিকার মতো পরাশক্তি যেই আফগানিস্তানের কাছে পাত্তা পায়নি, তাদের সাথে শত্রুতা করার অর্থ নিজের বিপদ ডেকে আনা। কয়েকটা যুদ্ধবিমানের লোভে আফগানিস্তানের মতো প্রতিবেশীকে ক্ষেপিয়ে নিজেদের পতন ডেকে আনা কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়।