খাবারের টেবিলে কিভাবে আজরাইল এসে হাজির হয় সেই দৃশ্য গতরাতে স্বচক্ষে দেখেছে ইজরাইলের সেনাবাহিনী। হাইফা সেনাঘাঁটিতে গোলানি বিগ্রেডের সৈন্যরা যখন ডিনার করতে বসেছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে ডাইনিং লাউঞ্জের মধ্যে উড়ে আসে হিজবুল্লার একটি ড্রোন। ড্রোন তো নয়, এ যেন সাক্ষাৎ আজরাইল। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অর্ধ শতাধিক ইহুদি সৈন্য। তারা যেভাবে ইসরাইলজুড়ে আয়রনডোম বসিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে ভোজনবিলাসে লিপ্ত ছিল, তাতে তারা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি যে তাদের উপর তাদের ঘাড়ে এমন করে মৃত্যুদূত সওয়ার হবে।
হাইফার সেনা ঘাঁটিতে হিজবুল্লার আকস্মিক এই ড্রোন আক্রমণে পুরো ইসরাইল হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে। ভয়াবহ সেই ড্রোন বিস্ফোরণের পর ইসরাইলি উদ্ধার হেলিকপ্টার এবং এম্বুলেন্সগুলোকে ব্যস্তভাবে ছুটোছুটি করতে দেখা গেছে। হেলিকপ্টার থেকে আহত এবং নিহত সৈন্যদের স্ট্র্যাচারে করে নামানোর দৃশ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।
গত বছরের সাত অক্টোবর হামাসের হামলার পর হিজবুল্লাহর এই আক্রমণকেই ইসরাইলের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এটি শুধু হাইফার সেনাঘাঁটিতে একক আক্রমণ ছিল না, বরং অপারেশন ফুল স্কোয়াড্রোন নামের এই অভিযানে সেনা ক্যাম্পের পাশাপাশি মোসাদ হেডকোয়ার্টার সহ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় হিজবুল্লাহ ড্রোন আক্রমণ চালিয়েছে। ইজরাইলের হাতে পৃথিবীর সর্বাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তথা আয়রনডোম থাকার কারণে তারা অনেকটা নিশ্চিন্তে বসবাস করছিল। কিন্তু এবার আয়রনডোমকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হিজবুল্লার ড্রোন এবং মিসাইলগুলো সফলভাবে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রায় আক্রমণ চালিয়েছে। এতটা আকস্মিকভাবে এই আক্রমণ চালানো হয়েছে যে ইসরাইলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিষয়টি মোটেই টের পায়নি, এবং কোন রকম সতর্কীকরণ পর্যন্ত এলার্ম পর্যন্ত বাজেনি। যার ফলে ইহুদী নাগরিক এবং সৈন্যরা সতর্ক হয়ে বাঙ্কারে লুকানোর আগেই তাদের ঘাড়ের উপর হিজবুল্লার ড্রোন সওয়ার হয়েছে।
গাজাবাসীর উপর ইসরাইলের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে সৌদি, মিশর, তুরস্ক এবং পাকিস্তানের মত শক্তিশালী মুসলিম দেশগুলো যখন নিরবতা অবলম্বন করছিল, সেই মুহূর্তে গাজাবাসীর জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল লেবাননের এই হিজবুল্লাহ বাহিনী। গাজার পক্ষে দাঁড়ানোর কারণে তারা ইসরাইলের বাহিনীর হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এমনকি হিজবুল্লার প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে। তবুও দলটি সামান্য সময়ের জন্য পিছপা হয়নি। ইসরাইল ভেবেছিল হিজবুল্লাহ লিডারদের হত্যা করলে তাদের থামিয়ে দেয়া যাবে। কিন্তু এখন সবকিছু ইসরাইলের জন্য হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের প্রিয় নেতার হত্যাকাণ্ডে প্রতিটি হিজবুল্লাহ যোদ্ধা প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত হয়ে ইজরাইলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দক্ষিণ লেবাননে গ্রাউন্ড অপারেশন চালাতে গিয়ে হিজবুল্লাহর এসব আত্মঘাতী যোদ্ধার হামলায় পাইকারি হারে মারা পড়ছে ইসরাইলি সৈন্যরা। সেই হামলার ক্ষত না শুকাতেই এবার সরাসরি ইসরাইলের সেনাঘাঁটিতে সফলভাবে ড্রোন হামলা চালিয়ে অর্ধ শতাধিক সৈন্যকে হতাহত করেছে লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনী। ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর উপর আক্রমণ চালাতে গিয়ে ইসরাইলি বাহিনী যেই শোচনীয় মার খেয়েছিল, এবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখা যাচ্ছে