গাজা — এক যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূমি, যেখানে প্রতিদিন সূর্য ওঠে ধ্বংসস্তূপের ওপরে, আর রাত নামে নিষ্পাপ মানুষের রক্তে ভেজা মাটির ওপর।
এই ভূমিতে শিশুর কান্না, বিধবার আহাজারি আর বাবার মৃতদেহ খুঁজে বেড়ানো সন্তানের দৃষ্টিই আজ সবচেয়ে নির্মম সত্য।
বিশ্ব যখন নীরব, তখন গাজাবাসী একা দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গণধ্বংসের মুখোমুখি।
এখন আর শুধু বোমা নয়, অর্থ লোভে তাড়িত হয়ে বুলডোজার চালাচ্ছে বেসামরিক ঠিকাদারেরা।
গাজাবাসীর ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে এখন কেউ কেউ আয় করছে লাখ লাখ টাকা।
ইসরায়েলি সেনারা এখন শুধু নিজেরাই নয়, বেসরকারি ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।
‘দ্য মার্কার’ নামক ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এসব ঠিকাদাররা মাসে প্রায় ৯ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করছেন—যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১ লাখ।
এই টাকার জন্যই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভারী যন্ত্রচালকেরা প্রতিদিন ভেঙে ফেলছেন একটি করে বাড়ি—দুইতলা, তিনতলা, পাঁচতলা—যত উঁচু, আয় তত বেশি।
একজন যন্ত্রচালক সাংবাদিকদের বলেছেন,
“শুরুতে টাকার জন্য করতাম, পরে প্রতিশোধ নিতে শুরু করি। সেনারা শুধু ধ্বংস করতে চায়। ওদের কোনো পরিকল্পনা নেই।”
আরও ভয়ঙ্কর হলো, কিছু ঠিকাদার নিজেদের ‘শেরিফ’ মনে করে যা ইচ্ছা তাই করছে গাজায়। তাদের নিরাপত্তা দেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা যখন খাবারের খোঁজে আসে, তখন তাদের ‘ঝুঁকি’ বলে গুলি চালানো হয়।
ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে এক বাড়তি অর্থ আয়ের আশায় হত্যা করা হয় ত্রাণ নিতে আসা সাধারণ মানুষদের।
এমনই এক হামলায় সম্প্রতি নিহত হন ইসরায়েলি সেনা আব্রাহাম আজুলায়, যিনি নিজেই ছিলেন একজন যন্ত্রচালক।
তাকে গর্বের সঙ্গে স্মরণ করেন রিলিজিয়াস জায়োনিস্ট পার্টির এক সংসদ সদস্য—যিনি বলেন, “আজুলায় বহু বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন—তিনি জানতেন হয়তো আর ফিরে যাবেন না।”
এ যেন এক নৃশংস বিজয়ের অহঙ্কার!
ঘরবাড়ি ধ্বংস এখন শুধুই একটি লাভজনক চুক্তি—যেখানে ইহুদিবাদীরা ঘর গুঁড়িয়ে টাকা কামায়, আর মুসলমানরা হারায় সব।
গাজার উপর এমন বর্বরতা আর হত্যাযজ্ঞের মাঝেও বিশ্ব মানবতা আজ চুপচাপ।
কোথাও নেই কোনো জাতিসংঘের তড়িৎ পদক্ষেপ, নেই মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠ।
এ যেন চোখের সামনে মানবতাকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেললেও কেউ দেখছে না!
আর না! এখনই জাগতে হবে—নইলে ইতিহাস রক্ত দিয়ে আমাদের নাম লিখে রাখবে কাপুরুষদের কাতারে।
তাহসান সিদ্দিক, এমবিএ টাইমস।