মালদ্বীপের পর এবার কানাডা থেকেও ঘাড় ধরে বের করে দেয়া হচ্ছে ভারতীয়দের। খালিস্তানি নেতা হারদ্বীপ সিং নিজ্জারকে হত্যা করে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী কানাডায় হাতেনাতে ধরা পড়েছে, যার প্রেক্ষিতে সেখানে দায়িত্বরত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সহ অন্তত ৬ জনকে সরাসরি বহিস্কার করেছে কানাডা সরকার। একই সাথে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে ভারতীয় দূতাবাসের চার কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে রয়্যাল কানাডিয়ান পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক সংবাদ সম্মেলনে সরাসরি ভারতীয় সরকারকে দোষী করে নজিরবিহীন বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারতীয় গোয়েন্দারা কানাডার একজন নাগরিককে কানাডার মাটিতে এসে হত্যা করেছে। এই ভয়াবহ অপরাধের জন্য তাদেরকে চূড়ান্ত শাস্তি পেতে হবে।
বিশ্ব মহলে বিভিন্ন গোয়েন্দা অপারেশন চালাতে গিয়ে ভারত বার বার ঠোকর খেলেও তাদের যেন লজ্জা হয়নি, তাই তো বিড়াল হয়ে্ও বার বার বাঘ সাজতে গিয়ে এবার আসল বাঘের লেজেই পা দিয়ে ফেলেছে। আজকের প্রতিবেদনে আমরা ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর এমনই একটি লজ্জাজনক ঘটনা তুলে ধরবো, যা তাদের সকল গব অহংকারকে ধুলোয় মিশিয়ে তো দিয়েছেই, উপরন্তু নিজেদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের মত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে এনেছে।
সময়কাল ২০২৩, ভারতীয় রাজ্য পাঞ্জাবকে আলাদা করে শিখদের জন্য স্বাধীন খালিস্তান গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছিলেন শিখ নেতা হারদ্বীপ সিং নিজ্জার, যিনি নিজে একজন কানাডিয়ান নাগরিক। কানাডায় যে দশ লাখের মত ভারতীয় বসবাস করে, স্বাধীন খালিস্তানের পক্ষে তিনি তাদের জনগত গঠন করে ফেলেছিলেন। একারণে তাকে থামিয়ে দিতে ভারত সরকার তাদের গোয়েন্দা বাহিনী র এর উচ্চপদস্থ কয়েকজন অফিসারকে কানাডা পাঠায়। সেখানকার ভারতীয় দূতাবাসের সহযোগিতায় র এর গোয়েন্দারা হরদ্বীপ সিং নিজ্জারকে একটি শিখ মন্দিরের বাহিরে গুলি করে হত্যা করে। ভারত মনে করেছিল তাদের চালাকি কেউ ধরতে পারবে না। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই কানাডা সরকার তাৎক্ষণিক তদন্ত করে সরাসরি ভারতীয় গোয়েন্দাদের দায়ী করে। সংসদে দাড়িয়ে ভারতকে উদ্দেশ্য করে নজিরবিহীন বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এরপর গত এক বছর বিস্তারিত তদন্ত চালিয়ে অকাট্য সব প্রমাণাদি হাতে পেয়েছে রয়্যাল কানাডিয়ান পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এরই মধ্যে চার ভারতীয় কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারতীয় দূতাবাসের বাকি কর্মকর্তাদের কানাডা ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাদেরকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যে কোন মুুহুর্তে তাদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি।
এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ সরাসরি জড়িত বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। কুখ্যাত বিশ্নোই গ্যাংকে ব্যবহার করে তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। বর্তমানে পুরো ব্যাপারটি ভারতীয় সরকারের জন্য গলার ফাস হয়ে দাড়িয়েছে। তাদের গোয়েন্দা বাহিনী র নিজেদেরকে মোসাদ সিআইএর মত দুর্ধর্ষ মনে করে অন্য দেশে অপারেশন চালাতে গিয়েছিল। কিন্তু এখন হাতেনাতে ধরা পড়ে নিজেদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে এনেছে, একই সাথে বিশ্বমহলে ভারতের সমস্ত গর্ব অহংকারকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দারা ভুলে গিয়েছিল, এটা বডিউডের মুভি নয়, বরং বাস্তব দুনিয়া। সিনেমার গাজাখুরি গল্প এখানে চলবে না। একারণে একটা অভিযান চালাতে গিয়েই এখন তাদের ধুতি খুলে গিয়েছে।
আরিফুর রহমান আযাদ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এমবিএ টাইমস