ক্ষমতার গন্ধ পেতে না পেতেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের জবরদখল এবং চাঁদাবাজির সংবাদ আসতে শুরু করেছে। র এর এজেন্ট হিসেবে পরিচিত ভুয়া ডায়মন্ড বিক্রেতা দিলীপ আগরওয়ালার সাথে গোপন মিটিং, এস আলমের বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে ফেলা, শিমুলিয়া ঘাট দখল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টাকার বিনিময়ে মামলা থেকে নাম বাদ দেয়া, এমনকি পাবনা মানসিক হাসপাতালেও বিএনপিপন্থী দালালেরা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে মর্মে সংবাদ পাওয়া গেছে। এছাড়া উত্তরপ্রদেশের কসাই যোগী আদিত্যনাথের একান্ত আস্থাভাজন চট্টগ্রামের কুশল বরণ চক্রবর্তীকে এখন বিএনপি মহাসচিবের সাথে দেখা যাচ্ছে।
যদিও বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে চাঁদাবাজির ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে, তথাপি থেমে নেই বিপথগামী বিএনপি নেতাদের অপকর্ম। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক সংবাদ এসেছে গুলশানের একটি অভিজাত হোটেল থেকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে খুনের আসামি, ২৫ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির সাথে জড়িত, ভুয়া ডায়মন্ড বিক্রেতা এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সাথে গোপনে মিটিং করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন। উভয়ের মিটিংয়ের একপর্যায়ে দিলীপ কুমারকে বলতে শোনা যায় ‘বাজেট কোন বিষয় না’। অর্থাৎ বিশাল বাজেটের বিনিময়ে র এর এজেন্ট হিসেবে পরিচিত আগরওয়ালাকে বাচিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা। অবশ্য ঘটনা ফাস হয়ে যাওয়ায় আগারওয়ালা গতকাল রাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
এস আলমের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রয় করে ব্যাংকের টাকা ফেরত দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি নেতা এনামের নেতৃত্বে কালুরঘাটের একটি ওয়ার হাউস থেকে এসআলমের কমপক্ষে 13 টি বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নেয়া হয়। রোলস রয়েলস, মার্সিডিস, বিএমডব্লিউ, অডি, পোরশে এবং রেঞ্জ রোভারের মত দামী এসব গাড়ি বিক্রি করে পাওনা আদায়ের কথা থাকলেও বিএনপি নেতাদের সহায়তায় এস আলম এসব গাড়ি সরিয়ে ফেলেছে।
তুমুল সমালোচনার পর গতকাল বিএনপি নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, এস আলমের সঙ্গে তাদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। যদিও ভিডিওতে তাদেরকে স্পষ্টভাবেই গাড়ি সরানোর কাজে তদারকি করতে দেখা গেছে।
এদিকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট দখল করে বিএনপি নেতারা টোল আদায় করছেন মর্মে সংবাদ পাওয়া গেছে। সরকারি ইজারাদার সুলতান মোল্লা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন– তার কর্মীদেরকে মারধর করে ঘাট থেকে তাড়িয়ে দিয়ে বিএনপি নেতারা এখন সেখানে টোল আদায় করছেন। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া নেতাদের বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মুন্সীগঞ্জের কুমারভোগ ইউনিয়নের বিএনপি নেতাকর্মীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহসিন নামে একজন বিএনপি নেতা টাকার বিনিময়ে মামলা থেকে আওয়ামী লীগ আসামিদের নাম বাদ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি কল রেকর্ডে শোনা যায় — ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহসিন আহমদ ভূঁইয়া ‘‘আসামির তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়া’’র জন্য হৃদয় নামের এক আওয়ামী লীগ নেতার কাছে চাঁদা দাবি করছেন। অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মহসিন আহমেদকে গ্রেফতারের দাবিতে গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানববন্ধন হলেও এখনো তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এদিকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে এতদিন রোগী ভর্তি ক্ষেত্রে আওয়ামী পন্থী দালালরা চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তাদেরকে তাড়িয়ে এখন বিএনপিপন্থী দালালেরা দেশের বৃহত্তম এই মানসিক হাসপাতাল দখল করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলেও প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিএনপি নেতাদের এ ধরনের চাঁদাবাজির সংবাদ আসছে।
সমালোচকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের শূন্যস্থানে বিএনপির কিছু নেতা যেভাবে চাদাবাজি করছেন, তাতে পুরো দলকেই বড় রকম খেসারত দিতে হবে। কারণ যেই ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগের মতো শক্তিকে ক্ষমতা থেকে উপড়ে ফেলেছে, বিএনপিকে শায়েস্তা করা তাদের জন্য অতি সহজ ব্যাপার। কাজেই দলীয় চাঁদাবাজদের বহিষ্কার সহ কঠোর ব্যবস্থা না নিলে নতুন বাংলাদেশে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
আরিফুর রহমান আযাদ
এমবিএ টাইমস, ডেস্ক রিপোর্ট