বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়া যে পক্ষপাতের দোষে চরমভাবে দুষ্ট, তার চাক্ষুস উদাহরণ হচ্ছে— এরা এখনও শায়খ আহমাদুল্লাহকে ঠিকমতো এপ্রিসিয়েট করতে পারছে না। এবারের বন্যায় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি যে মহাকর্মযজ্ঞ পালন করে যাচ্ছেন, তার ছিটেফোঁটাও দেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলোতে নেই।
পরিমণি কতবার টয়লেটে গেলেন, অথবা শাহবাগে চারটা ব্যানার নিয়ে পাঁচটা সেক্যুলার দাড়িয়ে কী বললো, সেগুলো নিয়ে মিডিয়াগুলো মুহুর্মুহু লাইভ করতে পারে। কিন্তু আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন যে মাত্র একদিনে ২০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করেছে, তাদের বিকাশ-নগদে দুই ঘণ্টায় যে তিন লক্ষ ট্রানজেকশন হয়েছে– এগুলো চোখে পড়ে না একশ্রেণীর দিনকানা মিডিয়ার। এসব মিডিয়া যখন শাহবাগের তিনজন বামপন্থীর সমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত, তখন শায়েখ আহমাদুল্লাহ ট্রাক্টরে চড়ে ফেনীর দুর্গম বন্যাকবলিত এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। এই কাজটি যদি তার বদলে কোন অভিনেত্রী কিংবা বাম রাজনীতিবিদ করতো, তাহলে মিডিয়াগুলো ঠিকই হুমড়ি খেয়ে পড়তো। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু সেক্যুলার মিডিয়ার বিমাতাসুলভ আচরণের কোন পরিবর্তন হয়নি।
মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার একচোখা নীতির বড় উদাহরণ হচ্ছে গতকাল প্রকাশিত দৈনিক প্রথম আলো। অয়ন চক্রবর্তী নামের একজন হিন্দু বন্যার জন্য পুজোর টাকা দান করেছে, তারা সেটার নিউজ করেছে। কিন্তু দানটা যে আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশনে করেছে, সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গেছে। কারণ একজন হিন্দু আসসুন্নাহর মত ইসলামী প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বাস করে পুজোর টাকা দান করেছে, এই সংবাদ প্রচার করলে প্রথম আলোর জাত চলে যাবে। এর একটাই কারণ, আসসুন্নাহ ইসলামী প্রতিষ্ঠান, শায়খ আহমাদুল্লাহ একজন হুজুর, আর প্রথম আলো এলিট পত্রিকা। হুজুরের নিউজ করলে তাদের জাত চলে যাবে। কিন্তু যেই বিদ্যানন্দ পানির ওপর দাড়িয়ে থাকা অলৌকিক কুকুরকে বিস্কুট খাওয়ায়, যাদের হাত ধরে একই মজিদ চাচা বিভিন্ন রূপে দেখা দেয়, তাদের নিয়ে মিডিয়ার মাতামাতির শেষ নেই।
তবে এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, কোন্ মিডিয়া কী করলো না করলো, শায়খ আহমাদুল্লাহদের সেগুলো দেখারও সময় নেই । তারা লাখ লাখ মানুষের কোটি কোটি টাকার ত্রাণ নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লার বিস্তীর্ণ এলাকা। তাছাড়া শায়খ আহমাদুল্লাহ অথবা আস সুন্নাহর ফেসবুক এবং ইউটিউবে এত ভিউ হয়, মূলধারার অনেক মিডিয়া যার ধাারে কাছেও যেতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মানুষ এখন সামাজিক মাধ্যম থেকেই সঠিক সংবাদ জেনে নেয়। এক্ষেতে জাতীয় চ্যানেলগুলো মানুষের কাছে একেবারেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।
সিলেটের বন্যায় আসসুন্নাহর কন্ট্রিবিউশান ছিল ১৭ কোটি টাকারও বেশি। গাছ রোপন করেছেন কয়েক লক্ষ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চিকিৎসা বাবদ বরাদ্দ করেছেন ১০ কোটি টাকা। এছাড়া করোনা মহামারি, রোহিঙ্গা শরনার্থী, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, স্বাবলম্বী প্রকল্পে পুরুষদের রিকশা-গরু-ছাগল দেয়া, মহিলাদের সেলাই মেশিন দিয়ে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেয়া— এভাবে হিসেব করলে আসসুন্নাহর কাজের পরিধি সুবিশাল, সুবিস্তৃত এবং সুপরিকল্পিত আকারে লক্ষ্য করা যায়।
চলমান বন্যার প্রথম দুই দিনে তাদের পরিকল্পনা ও কর্মযজ্ঞ থেকে আভাস পাওয়া যাচ্ছে– এবার আসসুন্নাহর ত্রাণ কার্যক্রম অতীতের সমস্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। এরকম একটি বিশ্বস্ত সুপরিকল্পিত প্রতিষ্ঠান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এই দেশবাসীর ওপর বিশাল রহমত, যারা ইতোমধ্যে মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় পৌছে গেছে। কাজেই মিডিয়া নিউজ করলো কী করলো না, তাতে আসসুন্নাহ বা শায়খ আহমাদুল্লাহদের কিছু যায় আসে না।