জল, স্থল এবং সমুদ্রপথ— তিন দিক থেকে লেবাননে হামলার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ইহুদীবাদী ইসরাইল। কিন্তু তারা যদি লেবাননকে গাজার মত মনে করে, তাহলে চরম ভুল করবে। কারণ গাজা আর লেবানন দুই জায়গার স্ট্রাটেজি সম্পূর্ণ ভিন্নরকম। শুরুতেই আমরা দুটি জায়গার কৌশলগত পার্থক্য তুলে ধরছি।
গাজা অবরুদ্ধ একটি এলাকা, আর লেবানন স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ।
গাজায় হামাস ছাড়া আর কেউ ছিল না। কিন্তু লেবাননে হিজবুল্লাহর পাশাপাশি শক্তিশালী নিয়মতান্ত্রিক সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী আছে।
হামাসের কাছে হালকা যুদ্ধাস্ত্র আর রকেট ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। কিন্তু লেবানিজ আর্মির কাছে যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে ট্যাংক, কামান ও চালকবিহীন ড্রোনসহ আধুনিক সমরাস্ত্র রয়েছে।
গাজা চতুর্দিক থেকে অবরুদ্ধ হওয়ায় হামাসের কাছে অস্ত্রসাহায্য আসার কোন উপায় ছিল না। কিন্তু লেবাননের সাথে তাদের মিত্র সিরিয়ার ৪০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। যেখান দিয়ে ইরান ও সিরিয়া হিজবুল্লাহর জন্য সমস্ত অস্ত্র সরবরাহ করবে।
গাজা অবরুদ্ধ হওয়ার কারণে সেখানে বাহির থেকে কোন যোদ্ধা যোগ দিতে পারেনি। কিন্তু লেবানন-সিরিয়া সীমান্ত উন্মুক্ত থাকায় এদিক দিয়ে প্রয়োজন অনুসারে ইরান ও সিরিয়া অজস্র যোদ্ধাকে লেবাননে পাঠাতে পারবে।
সবমিলিয়ে গাজা আর লেবাননের মধ্যে এত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ইসরাইল লেবাননে হামলা অব্যাহত রেখেছে। এমনকি ২০০৬ সালের পরিণতি ভুলে গিয়ে তারা স্থল অভিযানও শুরু করেছে। এদিকে হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর হিজবুল্লাহর ডেপুটি প্রধান অমুক জানিয়েছেন, ইসরাইলের স্থল অভিযান মোকাবেলার জন্য হিজবুল্লাহ এবং তার সহযোগী বাহিনীগুলো সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে। এরপরেও ইসরাইল যদি লেবাননের মাটিতে পা রাখার দুঃসাহস করে তাহলে ২০০৬ সালের পরিণতি তাদের আবারো বরণ করতে হবে।
সমর বিশ্লেষকরা বলছেন, লেবানন-ইসরাইল স্থলযুদ্ধ শুরু হলে ইরান তাদের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সদস্যদেরও ছদ্মবেশে লেবানন পাঠাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া ইরাক ও সিরিয়ায় ছড়িয়ে থাকা ইরান সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়া গ্রুপগুলোও এই লড়াইয়ে যোদ দেবে। হিজবুল্লাহর সমর্থনে এই হাজার হাজার যোদ্ধা লেবাননে ঢুকে যদি মরণপণ আক্রমণ শুরু করে, তাহলে ইসরাইলকে আবারো ২০০৬ সালের পরিণতি বরণ করা লাগতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে ইসরাইল লেবাননে স্থল অভিযান চালাতে গেলে উভয় দেশের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। লেবাননের পক্ষ থেকে হিজবুল্লাহ সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়। হিজবুল্লাহর ছোড়া হাজার হাজার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলে আঘাত হানে। সেই যুদ্ধে ১২১ জন সৈন্যসহ মোট ১৬৫ ইহুদীকে হিজবুল্লাহ হত্যা করেছিল।
এতকিছুর পরেও ইসরাইল যদি লেবাননে আগ্রাসন অব্যাহত রাখে, তাহলে তাদেরকে আবারো ২০০৬ সালের পরিণতি বরণ করা লাগতে পারে।