হামাস প্রধান ইয়াহয়া সিনওয়ারকে আত্মঘাতী ড্রোন হামলায় হত্যা করার পর ইসরাইলের সৈন্যরা যখন উল্লাস উন্মাদনায় ব্যস্ত, এবং হামাস, ফিলিস্তিন সহ পুরো মুসলিম বিশ্ব জুড়ে যখন গভীর শোকে কাতর। তখন হামাসের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হলেন এমন একজন সাহসী ও লড়াকু যুদ্ধাখ্যত ব্যক্তি. যার নাম শুনে আবারও ইসরাইলী বাহিনীকে নড়ে চড়ে বসতে হলো। আজকের প্রতিবেদনে আমরা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা খালেদ মাশালের সংক্ষিপ্ত জীবন ও কর্ম তুলে ধরছি।
১৯৫৬ সালে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় জন্মগ্রহণ করেন খালেদ মাশাল । ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল ফিলিস্তিন যুদ্ধে ফিলিস্তিন থেকে জর্ডানে চলে যেতে বাধ্য হন তার পরিবার। ফলে তার শৈশবের বড় একটা সময় কেটেছে জর্ডানে।
ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা ও রাজনীতিতে বেশ আগ্রহী ছিলেন মাশাল। কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক করার সময়েই তিনি ফিলিস্তিনি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। এখান থেকেই শুরু হয় তার রাজনৈতিক জীবন। ১৯৮৭ সালে, যখন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী আন্দোলন বা হামাস গঠিত হয়, তখন তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম একজন। হামাসের আদর্শ ছিল ফিলিস্তিনের পূর্ণ স্বাধীনতা এবং ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ।
খালেদ মাশালের রাজনৈতিক উত্থান মূলত ১৯৯২ সালে, যখন তিনি হামাসের পলিটব্যুরোর চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি ধীরে ধীরে হামাসের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার নেতৃত্বে হামাস ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের এক শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়। 2010 সালে ব্রিটিশ নিউ স্টেটসম্যান ম্যাগাজিন “দ্য ওয়ার্ল্ডস 50 মোস্ট ইনফ্লুয়েন্সিয়াল ফিগার এর তালিকায় খালেদ মাশালকে 18 নম্বরে তালিকাভুক্ত করে।
১৯৯৭ সালে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একটি দল মাশালকে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা করলে তার চতুরতা ও বিচক্ষণতায় এই হত্যাচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এই ঘটনার পর, তিনি আন্তর্জাতিক মহলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে আরও পরিচিত হয়ে ওঠেন। এবং তার নেতৃত্বে হামাসের অনেক সাহসী কর্মকাণ্ড যেমন আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং ইসরায়েলের উপর মুহুর মুহুর রকেট আক্রমণ, বিশ্বজুড়ে তাকে ইসরাইলের জমদূত হিসেবে পরিচিত করে দেয়।
২০১৭ সালে, তিনি হামাসের পলিটব্যুরোর চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে হামাসের নেতৃত্বে তিনি দীর্ঘদীন যাবত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছিলেন। এবং সর্ব শেষ ইয়াহয়া সিনওয়ার মৃত্যর পর তিনি বর্তমান হামাস প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। খালেদ মাশালের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই অধ্যায়গুলো থেকে প্রমাণিত হয় তার অনড় অবস্থান ও নেতৃত্বের দৃঢ়তা, যা ফিলিস্তিনের মুক্তির সংগ্রামে হামাসকে শক্তিশালী করে তুলেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইয়াহয়া সিনওয়ারের মৃত্যতে ইসরাইলী বাহিনী যতটা না খুশি হয়েছে, খালেদ মাশাল হামাস প্রধানের দায়িত্ব পাওয়াতে তাদের যেন রাতের ঘুম আরো বেশি হারাম হয়েছে।