ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন এমন এক ব্যক্তি, যাকে এই পদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মনে করা হচ্ছিল। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন আর না পড়েন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ এদেশের অতীত থেকে ভবিষ্যৎ পর্যন্ত প্রতিটি রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনে এই প্রতিষ্ঠান যেহেতু মুখ্য ভূমিকা পালন করে, ফলে এখানকার উপাচার্য পদকে অত্যন্ত গুরুত্বপূূূর্ণ এবং স্পর্শকাতর মনে করা হয়। যুগ যুগ ধরে রাজনৈতিক বিবেচনায় ভিসি নিয়োগ দেয়া হলেও এবার ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ড. নিয়াজ আহেমেদ খানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অন্যান্য বিষয়াদি শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠে যাবে।
দেখতে অত্যন্ত সাদামাটা এই ব্যক্তি তার জীবনে কোনদিন পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি। কুমিল্লা বোর্ড থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স এবং মাস্টার্সে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। অত্যন্ত মেধাবী এই ব্যক্তি ওয়েলস, অক্সফোর্ডসহ বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পর বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করেছেন। তবে নিয়াজ আহমেদ খানের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি আপাদমস্তক রাজনীতি-বিচ্ছিন্ন একজন মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদের জন্য এটাই সবচেয়ে জরুরী জিনিস ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘৃণ্য ছাত্র রাজনীতির শিকার হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত হয়েছে। রাজনীতি না করার কারণে হাজার হাজার ছাত্র আবাসিক হলে জায়গা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতো। ক্লাস বাদ দিযে রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নিতে বাধ্য করা হতো। ড. নিয়াজ আহেমেদ খান যেহেতু স্বৈরাচার বিরোধী চাটুকারমুক্ত একজন মানুষ, ফলে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা এবং বিজ্ঞানচর্চার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে।
ড. নিয়াজ আহেমেদ খান ভিসি নিযুক্ত হওয়ায় সারাদেশে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলেও শাহবাগী এবং বামপন্থী একটি মহল বেজায় নাখোশ হয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন আওয়ামী লীগের ‘পুরান মাল’ হিসেবে পরিচিত গোলাম মাওলা রনি; যার ঘন ঘন মুড সুইং নানা বিতর্ক জন্ম দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে নিয়াজ আহেমেদ খানের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি নিজেই ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন। ড. নিয়াজকে সবাই পছন্দ করার কারণ হচ্ছে— অরাজনৈতিক হওয়ার পাশাপাশি তিনি সাদামাটা দ্বীনদার একজন মানুষ। টিএসসিতে বক্তব্য দিয়ে মসজিদে ফিরে যখন দেখলেন মাগরিবের জামাত শেষ হয়ে গেছে, তখন সঙ্গে থাকা ছাত্রদেরকে নিয়ে নিজে ইমামতি করে নামাজ পড়িয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মসজিদে জামাতে ইমামতি করছে– এই দৃশ্য বামপন্থী সেকুলার শ্রেণীকে চরমভাবে আহত করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এদেশের গৌরবময় প্রতিষ্ঠান। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে জ্ঞান ও গরিমায় যেই প্রতিষ্ঠান গর্বিত হওয়ার কথা, সেখানকার সাবেক ভিসি ড. আখতারুজ্জামান এই বলে গর্ব করতেন যে— এখানে দশ টাকায় ‘ছা, ছপ ও সিঙ্গারা’ পাওয়া যায়।
তবে একটা কথা জোর গলায় বলাই যায়— ড. নিয়াজ আহেমেদ খানের আগমনে দশ টাকার ‘ছা ছপ সিঙ্গারা’র দিন শেষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার আলোয় নতুন করে উদ্ভাসিত হবে, এখান থেকে সুযোগ্য মানুষেরা তৈরি হয়ে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দিবে— এটাই এখন প্রত্যাশা সকলের।
আরিফুর রহমান আযাদ
এমবিএ টাইমস, ডেস্ক রিপোর্ট