গানে গানে তেলবাজি করলেও শেষ পর্যন্ত ধরা পড়লেন ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম। নগরবাসীর সমস্যা সমাধানের চাইতে বিভিন্ন সময়ে তৈলাক্ত গান গেয়ে শেখ হাসিনাকে তৈল মর্দনেই সবচেয়ে ব্যস্ত থাকতেন ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিতে আসা ঢাকা উত্তরের এই সাবেক মেয়র। ছাত্রজনতার আন্দোলনে নগর ভবনের পিছনে দরজা দিয়ে তার পালানোর দৃশ্য আগেই ভাইরাল হয়েছিল। এবার ভিন্ন আরেক আকৃতিতে পুলিশের হাতে তিনি ধরা পড়লেন মহাখালীর গোপন আশ্রয় থেকে। এ সময় নেটিজেন্ডরা চমকে উঠেছেন তার ছবি দেখে। গায়ে সাধারণ একরঙ্গা গেঞ্জি, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, বিধ্বস্ত চেহারা— সব মিলিয়ে এ যেন নতুন এক আতিকুল ইসলাম। তার চেহারা জনসম্মুখে আসার পর সবার মনে একটা গানই ঘুরে ফিরে আসছে— আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
মেট্রোরেলে গান, সমাবেশে গান, নির্বাচনী প্রচারণায় গান— যে কোন জায়গায় খালি গলায় গান গাইতে ভালবাসতেন ঢাকা উত্তরের কথিত এই নগরপিতা। তবে একটি ভিডিও চিত্রে তার সাথে যেসব ব্যক্তিকে গান গাইতে দেখা গিয়েছিল, আজকে তাদেরও সারিবদ্ধভাবে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আতিকুল ইসলামের ভাইরাল সেই গানের ভিডিওতে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে দেখা গিয়েছিল। এরা দুজনেই পুলিশের হাতে বন্দি হয়েছে। এদের মধ্যে জুনায়েদ আহমদ পলক সহ আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট মন্ত্রীদের লাইন ধরিয়ে, হাতকড়া পরিয়ে এবং বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে আজকে তাদের আদালতে হাজির করা হয়েছে।
পাশার দান যে কখন উল্টে যায়, সেটা কেউ বলতে পারে না। বেক্সিমকোর মালিক যেই সালমান এফ রহমান হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক, আজকে তাকে হাতকড়া পরিয়ে, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে পায়ে হাঁটিয়ে আদালতে হাজির করা হয়েছে। অথচ এক সময় এরা শেখ হাসিনার সাথে জোট বেঁধে এদেশের মানুষের রক্ত চুষে নিজেদের ভোগের সাম্রাজ্য বিস্তার করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে।
বিশেষ করে টাকার লোভে আওয়ামী লীগে এমন কিছু ব্যক্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছিল, যারা দলটির নিয়মতান্ত্রিক কোনো কর্মীই ছিলেন না। যেমন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান ছিলেন একজন পুরোদস্তুর অভিনেতা। হুমায়ূন আহমেদের আগুনের পরশমনি সহ বহু নাটক- সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। এরকম একজন জাত অভিনেতা টাকার লোভে আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেন। অপরদিকে সালমান এফ রহমান ছিলেন বেক্সিমকোর প্রতিষ্ঠাতা; যারা পুরোপুরি জাতীয় পর্যায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। কিন্তু টাকার লোভে এবং নিজের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে তিনি আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছেন, সর্বশেষ আজকের গ্রেফতার হওয়া আতিকুল ইসলাম ছিলেন একজন সলিড ব্যবসায়ী; যিনি এ দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর সভাপতি পর্যন্ত হয়েছিলেন। কিন্তু টাকা, ক্ষমতা এবং প্রভাব প্রতিপত্তির লোভে তিনিও আওয়ামী লীগের হিংস্র রাজনীতির খাতায় নাম লিখিয়েছেন। ঢাকা উত্তরের মেয়র হয়ে নিজের ভোগের সাম্রাজ্যকে আরো সুবিস্তৃত করেছিলেন। কিন্তু ছাত্র জনতার আন্দোলনে নগর ভবনের পেছনের দরজা দিয়ে সেই যে তার পলায়নের শুরু, আজকে মহাখালী ডিওএইচএস থেকে গ্রেফতার হয়ে তার অন্ধকার জীবনের সূচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের এই সমস্ত হাইব্রিড নেতাদের চূড়ান্ত শাস্তি হবে এবং তারা কারাগারে ধুঁকতে ধুঁকতে মারা যাবে– এমনটাই প্রত্যাশা এদেশের আপামোর ছাত্র জনতার