চোর তো জীবনে আপনি অনেক দেখেছেন, এমনকি আওয়ামী লীগের গরু চোর ছাগল চোরও দেখেছেন। কিন্তু আজকে আমরা পরিচয় করিয়ে দিব এমন এক ডিজিটাল চোরের সাথে, যে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বানানোর কথা বলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আগাগোড়া লুটপাট করেছেন।
মিডিয়ার সামনে এই লোকটিকে দেখে শান্তশিষ্ট মনে হলেও বাস্তবে তিনি আপাদমস্তকও এক চোর। তিনি যেহেতু আইসিটি প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন, অপরদিকে সজীব ওয়াজেদ জয় তার মায়ের পক্ষ থেকে আইসিটি উপদেষ্টা হয়েছিল, ফলে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী এবং আইসিটি উপদেষ্টা দুজনে লুটপাটের ক্ষেত্রে একটি সমঝোতায় এসেছিলেন। যেটাকে প্রবাদে বলা হয় চোরে-চোরে মাসতুতো ভাই।
ডিজিটাল বাংলাদেশের সাইনবোর্ড দেখিয়ে আওয়ামী সরকার বিলিয়ন ডলারের যেসব প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিল, সবগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছিল জয় এবং পলকের হাতে। সরকারের ডিজিটাল কার্যক্রমের প্রত্যেকটা প্লাটফর্ম থেকে এরা নিজস্ব সমঝোতার মাধ্যমে লুটের টাকা ভাগাভাগি করেছেন। এদের যৌথ চৌর্যবৃত্তির অন্যতম উদাহরণ ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার কেলেঙ্কারি। দেশের ১১ কোটি মানুষের আইডি কার্ডের ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর তথ্য জয় এবং পলকের যৌথ গ্যাং আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করে দিয়েছিল ২০ হাজার কোটি টাকায়। সেখান থেকে জুনায়েদ আহমেদ পলক চোখের পলকে নিজের ভাগের অংশ পেয়ে হাজার কোটির মালিক বনে গেছেন। অর্থাৎ শুধু একটা কেলেঙ্কারি ঘটিয়েই পলক নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। তাহলে সরকারের অন্যান্য ডিজিটাল প্রকল্প— যেখানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে শুরু করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অজস্র সেক্টর রয়েছে, প্রত্যেকটা সেক্টর থেকে জয় এবং পলকের গ্যাং কী পরিমাণ টাকা লুট করেছে, সেটা কল্পনা করাও কঠিন।
২০০৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় পলক লিখেছিলেন— তার নিজস্ব কোন টাকা নেই বরং বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার করে তিনি নির্বাচনের খরচ নির্বাহ করছেন। সেই ব্যক্তি ২০২৪ সালের নির্বাচনে নিজের প্রদর্শিত সম্পত্তিই দেখিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এমনকি নিজের স্ত্রীকে দেখিয়েছেন হাজার কোটি টাকার মালিক। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছেন, তার স্ত্রী শিক্ষকতা করে এই টাকা কামিয়েছেন। পৃথিবীর কোন সাবজেক্ট পড়িয়ে এক হাজার কোটি টাকা কামানো যায়, সেটাই এখন জগতের সবচেয়ে জটিল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৫ তারিখের পর আওয়ামী লীগের অনেক রাঘববোয়াল পালিয়ে গেলেও পলকের কপাল খারাপ। স্ত্রী-সন্তানকে বিদেশের বেগমপাড়ায় রেখেছেন ঠিকই, কিন্তু সরকার পতনের পর নিজে পালাতে গিয়ে এয়ারপোর্টে ধরা পড়েছেন। পলক আটক হওয়ার পর তার স্ত্রী বিদেশের অজ্ঞাত জায়গা থেকে ফেসবুকে দেয়া একটি ভিডিওতে বলেছেন— তাদের নামে হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সমস্ত অভিযোগ ভুয়া। বরং তিনি এখন স্বামীর অনুপস্থিতিতে সন্তানদের নিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছেন। অর্থাৎ পলক শুধু জয়ের সাথে মিলে লুটপাট করেননি, বরং নিজের পরিবারকেও জঘন্যভাবে মিথ্যাচারের তালিম দিয়ে গেছেন।
আওয়ামী লীগ শুধু হাতে হাতে চুরি করেনি, তারা পলকের মত ডিজিটাল চোরও জন্ম দিয়েছে। আইসিটির খাতের মাফিয়া হিসেবে পরিচিত পলকের অবৈধ সম্পত্তির অনেক কিছুই এখনো দেশেই আছে। নাটোরের সিংড়া উপজেলা, সদর উপজেলা এবং রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার এবং পরিবারের শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি আছে। রিমান্ডে তাকে আচ্ছামতো শায়েস্তা করলে দেশে থাকা এসব সম্পত্তি যেমন উদ্ধার করা যাবে, তদ্রুপ তাকে আটকে রেখে বিদেশে পাচার করা টাকাগুলোও ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা সম্ভব। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে কাজটি কি এই অন্তর্বর্তী সরকার করবে?