জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার মিজানুর রহমান আজহারীকে মালোশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে— এমন একটি সংবাদ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তিনি নিরাপদে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারলেও এই ঘটনার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অন্যরকম এক তথ্য। মিজানুর রহমান আজহারীকে বিমানবন্দরে আটকের নামে হয়রানি করার পেছনে মালয়েশিয়ার ভারতীয় বংশোদ্ভূত তামিল পুলিশদের হাতে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধু আজহারী নন, বিভিন্ন সময়ে মুসলিম প্রবাসী এবং টুরিস্টদের সাথে মালয়েশিয়ার তামিল পুলিশের হয়রানি কমন ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
মালয়েশিয়ার সাথে ভারতের দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর দূরত্ব খুব একটা নয়। মাঝখানে শুধু বঙ্গোপসাগর। ৭০-৮০-৯০ এর দশকে বহু ভারতীয় তামিল উন্নত জীবনের আশায় মালয়েশিয়া গমন করে। দীর্ঘদিন সেখানে বসবাসের ফলে ধীরে ধীরে তারা মালয়েশিয়ার নাগরিকত্ব লাভ করে। এরপর তাদের একটি বড় অংশ মালয়েশিয়ার পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেয়। বলাবাহুল্য, মালয়েশিয়া পুলিশ জাতিগতভাবে মুসলিম হলেও সেখানকার তামিল পুলিশরা ধর্মীয় দিক থেকে হিন্দু, সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ শিখও রয়েছেন।
এরাই বিভিন্ন সময়ে সেখানে বসবাসরত প্রবাসী মুসলিম শ্রমিকদের হয়রানি করে থাকেন। এমনকি ইমিগ্রেশনে অযথাই মুসলিম টুরিস্টদের নাজেহাল করার ভয়াবহ অভিযোগ রয়েছে মালয়েশিয়ার তামিল পুলিশদের বিরুদ্ধে। মিজানুর রহমান আজহারীকে এরাই হয়রানি করেছে মর্মে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে।
কয়েক বছর আগে প্রখ্যাত বক্তা মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী মালয়েশিয়ার ইসলামী সম্মেলনে যোগ দিতে গেলে তাকেও বিমানবন্দরে আটকে দেয় তামিল পুলিশ। পরবর্তীতে মালয়েশিয়ার স্থানীয় মুসলিমরা এসে তাকে নিজেদের দায়িত্বে নিয়ে যায়।
বিশিষ্ট ইসলামিক দায়ী ডক্টর জাকির নায়েক মোদি সরকারের রোশানলে পড়ে ভারত ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা শুরু করলে সেখানকার ভারতীয় বংশোদ্ভূত তামিলরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এমনকি মালয়েশিয়ার এক তামিল মন্ত্রী জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত আদালতে ডক্টর জাকির নায়েক নির্দোষ সাব্যস্ত হয়েছেন।
সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিল মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকীর ভাই আরেক ওয়াজ মাওলানা হাবিবুর রহমান মিসবাহর সাথে। এতদূর থেকে জার্নি করে যাওয়ার পরেও তাকে কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে আটকে দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা হয়রানি করা হয়। বৈধ ভিসা নিয়ে যাওয়ার পরেও শেষ পর্যন্ত তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
মাওলানা হাবিবুর রহমান মিসবাহ যেদিন মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন সেটি ছিল ঈদের দিন অথবা ঈদের পরের দিন। সে সময় মালয়েশিয়ার মুসলিম পুলিশদের বড় একটি অংশ ছুটিতে থাকায় ইমিগ্রেশনের অধিকাংশ দায়িত্বে ছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত তামিল পুলিশ, যারা জাতিগতভাবে হিন্দু ধর্মের। তারাই মূলত মাওলানা হাবিবুর রহমান মিসবাহকে নাজেহাল করে এবং শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
মিজানুর রহমান আজহারীর এই সংবাদ সামনে আসার পর অসংখ্য মালয়েশিয়ান মুসলিম প্রবাসী এবং পর্যটক নিজেদের ভয়াল অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন। মালয়েশিয়া এমনিতে যথেষ্ট রক্ষণশীল মুসলিম দেশ হলেও সেখানে ভারতীয় তামিলদের সংখ্যাও কম নয়। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের অনেক প্রবাসী শ্রমিক বৈধ হওয়া সত্ত্বেও এদের হাতে নাজেহাল হয়ে থাকেন। এরা পুলিশ-প্রশাসন এবং রাজনীতিতে এতটা প্রভাব সৃষ্টি করেছে যে অনেক সময় মালয়েশিয়ার স্থানীয় মুসলিমরাও অনিরাপদ বোধ করে। মালয়েশিয়ার মতো একটি উন্নত মুসলিম দেশে ভারতীয় বংশোদ্ভূত তামিলদের এ ধরনের প্রভাব এবং আধিপত্য দেশটির মুসলিম সমাজের জন্য বড় রকমের হুমকি।