আপনি কি জানেন, আজকের সুপার পাওয়ার আমেরিকা আরবদের হাতে তৈরি? পেট্রোডলার নামে ইতিহাসের জঘন্যতম এক চুক্তির মাধ্যমে আরব দেশগুলো কিভাবে আমেরিকাকে এমন দানবীয় শক্তিতে পরিণত করেছে, সেটাই আমরা দেখব এবারের প্রতিবেদনে।
১৯৭৩ সালে ইয়োম কাপুর নামে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সৌদি আরব দেখতে পেল তারা পৃথিবীর বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক রাষ্ট্র হলেও তাদের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী বা সক্ষমতা নেই। সে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন সৌদি আরবের কাছে ভয়ংকর এক প্রস্তাব নিয়ে আসেন। পেট্রডলার নামের এই চুক্তি অনুযায়ী সৌদিআরব পৃথিবীর যে কোন দেশের কাছেই তাদের তেল বিক্রি করুক না কেন, সেই তেল তারা মার্কিন ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করবে। এর বিনিময়ে আমেরিকা সৌদিকে সামরিক সহায়তা এবং যুদ্ধাস্ত্র প্রদান করবে। সেদিন সৌদিআরব মার্কিন অস্ত্রের সহযোগিতায় নিজেদের গদি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আমেরিকার সাথে পেট্রোডলার চুক্তিতে সই করে। সৌদির দেখাদেখি মধ্যপ্রাচ্যের অন্য আরব দেশগুলোও আমেরিকার সুনজর পাওয়ার আশায় ডলারের বিনিময়ে তেল বিক্রি শুরু করে। এর ফলে পৃথিবীর সমস্ত দেশ তেল কিনতে গিয়ে আমেরিকার ডলারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কারণ ডলার দিয়ে তেল কিনতে না পারলে প্রত্যেক দেশের কল-কারখানা থেকে শুরু করে সমস্ত যানবাহন বন্ধ হয়ে যাবে। বিষয়টা এমন দাঁড়ায়, আমেরিকা যে কোন উচ্ছিষ্ট কাগজকে ডলার হিসেবে ছাপিয়ে দিলে সেটি দিয়ে তেল কিনা যেত। এ কারণে সারা বিশ্ব আমেরিকার কাছে থেকে উচ্চমূল্যে ডলার কিনতে বাধ্য হয়। এভাবেই আমেরিকার কাগজের ডলার পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বস্তুতে পরিণত হয়। এবং এখনো তারা ইচ্ছেমত ডলার ছাপিয়ে আরবের তেল সহ সারা পৃথীবি থেকে যা ইচ্ছা তাই কিনে নিচ্ছে।
আমরা আরব রাষ্ট্রগুলোকে দোষ দিই তারা কেন আমেরিকার কাছে তেল বিক্রি করে। কিন্তু সৌদিসহ আরব দেশগুলোর সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে তারা তেলের মত মহামূল্যবান বস্তুকে আমেরিকার ডলারের সাথে যুক্ত করে দিয়েছে। পেট্রডলার চুক্তির মাধ্যমে তারা আমেরিকার ডলারকে পৃথিবীর সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন বস্তুতে পরিণত করেছে। এখন অবস্থা এমন দাড়িয়েছে, আমেরিকার ডলার ছাড়া বৈশ্বিক কোন বাণিজ্যই করা যায় না। যার ফলে আমেরিকা এখন দানবীয় পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।
সৌদি-আমেরিকার এই পেট্রোডলার বলয় ভাঙার জন্য যারা চেষ্টা করেছে, সবাইকেই আমেরিকা শেষ করে দিয়েছে। সাদ্দাম হোসেন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ইরাকের তেল তিনি ডলারের পরিবর্তে ইউরো বা স্বর্ণের বিনিময়ে বিক্রি করবেন, যাতে ডলারের উপর পৃথিবীর মানুষের নির্ভরশীলতা না থাকে। কিন্তু সেই সাদ্দামকে আমেরিকা ফাঁসি দিয়েছে। গাদ্দাফী চেয়েছিলেন লিবিয়ার তেল দিরহাম বা স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে বিক্রি করতে। তাকেও আমেরিকা হত্যা করেছে। এমনকি ইরানও ডলারের পরিবর্তে ইউরো, রাশিয়ান রুবল এবং চাইনিজ ইউয়ানের বিনিময়ে তেল বিক্রি শুরু করেছিল। যার ফলে এখন ইরানের উপরেও আমেরিকা ঝাপিয়ে পড়েছে।
আজকে আমেরিকা যে তার ডলারের শক্তিতে এত বড় দানব হয়ে উঠেছে, তার জন্য দায়ী সৌদিসহ আরব রাষ্ট্রগুলো, যারা কুখ্যাত পেট্রোডলার সিস্টেমের মাধ্যমে আমেরিকার কাগজের ডলারকে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী বস্তুতে পরিণত করেছ।