বাংলাদেশের বিজ্ঞান মনস্করা যখন মঙ্গল শোভাযাত্রায় হুতুম পেঁচার মুখোশ পরে বিজ্ঞানের চর্চা করছে, সেই মুহূর্তে আফগানিস্তানের যুবকেরা ড্রোন ও রাডার তৈরি করে আবারো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি আফগান এক যুবককে চালকবিহীন যুদ্ধবিমান বানিয়ে আকাশে ওড়াতে দেখা গেছে, যা বিশ্বখ্যাত মার্কিন ফাইটার f22 এর মডেল অনুকরণে বানানো হয়েছে। তবে বাজার থেকে খেলনা ড্রোন কিনে কোনমতে সেটাকে জোড়াতালি দিয়ে আকাশে ওড়ানো হচ্ছে— বিষয়টি মোটেই এমন নয়। কারণ এটি কোন ড্রোনই নয়, বরং বিমান অথবা যুদ্ধবিমান আকাশে উড্ডয়ন, অবতরণ এবং ডানে বামে ঘোরার ক্ষেত্রে ডানার পিছনের অংশকে যেভাবে উঁচু-নিচু করা হয়, মেধাবী আফগান যুবক তার এই বিমানেও সেই প্রযুক্তি প্রয়োগ করেছেন। এখানে খুব মুন্সিয়ানার সাথে তিনি পাখার পেছনে সূক্ষ্ম গাণিতিক হিসাব প্রয়োগ করে সফলভাবে তার বিমানকে আকাশে উড়াতে এবং নিরাপদে পুনরায় নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। মোটর এবং পাখা উপযুক্ত জায়গায় তিনি নিজেই স্থাপন করেছেন। কাজেই খেলনা ড্রোন কিনে জোড়াতালি দিয়ে উড়ানো হয়েছে, এমন অভিযোগ তোলার সুযোগ নেই।
আফগানিস্তানের বিজ্ঞান চর্চার আরেকটি নিদর্শন হলোঃ সম্প্রতি কাবুলের প্রযুক্তি প্রদর্শনীতে এক মেধাবী তরুণ তার নিজের তৈরি ও সংযোজিত রাডার ও সেন্সর প্রদর্শন করেছেন। এর সামনে কোন ধাতব বস্তু এমনকি মানুষ চলে আসলেও রাডার তাকে শনাক্ত করে নির্ধারিত পদ্ধতিতে সিগন্যাল দিতে পারে। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রাডার ও সেন্সর কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা বলাই বাহুল্য।
এদিকে কাবুলের সাবাওয়ান মোমান্দ নামের এক যুবক ছোট্ট একটি ট্যাংক তৈরি করেছেন। দূর নিয়ন্ত্রিত রিমোটের মাধ্যমে ছোট্ট এই ট্যাংক শত্রু এরিয়ার মধ্যে ঢুকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে গোলাবর্ষণ করতে পারে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ট্র্যাংকটি চেইন সিস্টেমের চাকার মাধ্যমে উঁচু-নিচু পথের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে নিখুঁত নিশানায় আঘাত হানছে।
এছাড়া গাড়ি, সাজোয়া যান এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যের মূল মেশিনারিজের ওপর আফগানরা বিশেষভাবে নজর দিয়েছে। কারণ বাইরের বডি-শেপ ওয়ার্কশপে জোড়াতালি দিয়ে অনেকেই বানাতে পারলেও আসল চালিকাশক্তি হচ্ছে ভেতরের মেশিনারিজ। এবং কোন প্রযুক্তি পণ্য আবিষ্কার বা মেরামতে এই মেশিনারিজ হচ্ছে আসল চ্যালেঞ্জ, যেটাকে আফগানরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে। একারণেই আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রদর্শনীতে তাদের উদ্ভাবিত মেশিনারিজকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করা হয়।
শুধু সামরিক যন্ত্রপাতি নয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, ফার্মিং এবং সবুজায়নেও বিজ্ঞানভিত্তিক নানা উদ্ভাবন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে আফগান যুবকেরা। বর্তমানে দেশটির শহর থেকে গ্রামে, নগর থেকে বন্দরে, ঘরে ঘরে প্রযুক্তি চর্চার ঢেউ শুরু হয়েছে। মেধাবী আফগান যুবকেরা মন দিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে চেষ্টা করছে এবং ইমারত সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত তথ্য বিনিময় এবং প্রশিক্ষণের জন্য তুরস্কের সাথে চুক্তি সম্পাদনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
প্রযুক্তি চর্চায় আফগানরা কত ভালোভাবে আত্মনিয়োগ করেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় আমেরিকার ফেলে যাওয়া হেলিকপ্টারগুলো সংস্কারের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ৭০০ কোটি টাকা দিয়ে ডেমু ট্রেন এনে সেগুলো মেরামতে অসহায় হয়ে পড়েছে। অথচ আমেরিকান সৈন্যরা তাদের অত্যাধুনিক ও জটিল টেকনোলজির যুদ্ধযান ও হেলিকপ্টারগুলো নষ্ট করে ফেলে গেলেও আফগানরা ঠিকই সেগুলো সংস্কার ও মেরামত করে পুনরায় আকাশে ওড়াচ্ছে।
সদ্য স্বাধীন হওয়া এই দেশটি প্রযুক্তিতে ক্রিয়েটিভিটি ও উদ্ভাবনি যোগ্যতা দেখাচ্ছে, অপরদিকে বাংলাদেশের বিজ্ঞান-মনস্করা স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও হুতুম প্যাঁচার মুখোশ দিয়ে মঙ্গল কামনার বিজ্ঞান চর্চা করছে। বিশ্লেষেকরা বলছেন, বর্তমানে আফগানিস্তানে প্রযুক্তির চর্চা ও উদ্ভাবনের যেই প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাতে সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন আফগানিস্তান আধুনিক প্রযুক্তি ও সমরাস্ত্রে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে।