বাংলাদেশের গরীব মানুষের টাকা লুট করে বিভিন্ন দেশে বিলাসী জীবন যাপন করছেন আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা। কানাডার বেগম পাড়া থেকে শুরু করে মালয়েশিয়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের খোঁজ পাওয়া গেছে। আজকের প্রতিবেদনে আমরা এমনই মোস্ট ওয়ান্টেড কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বর্তমান অবস্থান এবং বিলাসী জীবনের কথা তুলে ধরব।
নারায়ণগঞ্জের ওসমানী খেলাফতের সুলতান শামীম ওসমান ওরফে বোরকা ওসমান। সব সময় ‘খেলা হবে’ হুংকার ছাড়লেও ৫ তারিখের পর খেলার মাঠ ছেড়ে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। সম্প্রতি নির্ভরযোগ্য সূত্রে সংবাদ পাওয়া গেছে— শামীম ওসমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমানে অবস্থান করছেন। সেখানকার একটি শপিং সেন্টারে ঘোরাফেরা করার সময় প্রবাসী বাংলাদেশীদের ক্যামেরায় তিনি ধরা পড়েন। এর আগে ভারতের আজমিরের মাজারে তাকে দেখা গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে পাঁচ তারিখের পর গোপনে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে শামীম ওসমান প্রথমে ভারত পৌঁছান। এরপর আজমিরের মাজার জিয়ারত করে বিমানযোগে আরব আমিরাত পাড়ি জমিয়েছেন। আরব আমিরাতের আজমানে শামীম ওসমানের পরিবারের আরো অনেক লোক বসবাস করেন বলে জানা গেছে। দেশ থেকে পাচারকৃত টাকাতেই তারা সেখানে বিভিন্ন রকম ব্যবসা-বাণিজ্য দিয়ে বসেছেন। সরকার পতনের পর শামীম ওসমান সেখানে গিয়ে যোগ দিয়েছেন।
আওয়ামী সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। কারওয়ান বাজারের এই চাঁদাবাজ সরকার পতনের পর তৎক্ষণাৎ দেশ ছাড়তে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাকে ধরার জন্য ঢাকার চার জায়গায় চার বার অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, এ কারণে পুলিশের মধ্যে থাকা তার অনুগত অংশটি আগ থেকেই তাকে ইনফর্ম করে দিয়েছিল এবং প্রতিবার তাকে ঘেরাওয়ের আগেই তিনি নিরাপদে সরে যেতে সক্ষম হন। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে গত অমুক তারিখ তাকে কলকাতার ইকো পার্কে আবিস্কার করা হয়। সেখানে সন্ধার পরে কয়েকজন আওয়ামী নেতার সাথে বসে তাকে গল্প করতে দেখা যায়। এ সময় তার সাথে ছিলেন সালমান এফ রহমানের ছেলে অমুক এবং অমুক।
আগামী দুঃশাসনের অন্যতম পরিচিত মুখ সাবেক ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদ পাঁচ আগস্টের পর লম্বা সময় দেশে ছিলেন বলেই নিশ্চিতভাবে জানা গেছে। এমনকি পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে দেয়াল টপকে পালাতে গিয়ে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন এবং পথিমধ্যে মারধরের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মর্মেও সংবাদ পাওয়া গেছে। এরপর তাকে ধরতে বিভিন্ন সময় বিক্ষুব্ধ জনতা অভিযান চালালেও তার নাগাল পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে প্রশাসনের লোকদেরকে ম্যানেজ করে লোকচক্ষুর আড়ালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল একটি ছবিতে ডিবি হারুনকে নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের একটি রেস্টুরেন্টে বসে থাকতে দেখা গেছে। ধারণা করা হয় নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির কয়েকজনের সহযোগিতায় তিনি সেখানেই গোপনে অবস্থান করছেন।
৫ আগস্টের পরপরই যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তাদের হিসাব ভিন্ন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার এতদিন পরেও আওয়ামী লীগের এসব হেভিওয়েট মন্ত্রী এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা কিভাবে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন সেটা ডঃ ইউনুস সরকারের উপর বড় রকম প্রস্থ হয়ে দেখা দিয়েছে। এছাড়া যারা দেশে ধরা পড়েছেন, তাদের অনেকেই কারাগারে এসি রুমে অত্যন্ত আরাম আয়েশে জীবনযাপন করছেন বলে জানা গেছে। আবু সাইদ মুগ্ধদের খুনিরা গ্রেফতার হয়েও এসি রুমে বাতাস খাবে— এমন দৃশ্য এদেশের বিপ্লবী জনতা দেখতে চায়নি।
মামনুন বিন মাসউদ
এমবিএ টাইমস, ডেস্ক রিপোর্ট